ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবটা ছিল বিআরটিএর জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তঃ হানিফ খোকন

Yasin Hoque    |    ০৩:৩৭ পিএম, ২০২০-০৬-০৬


ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবটা ছিল বিআরটিএর জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তঃ হানিফ খোকন

ইয়াছিন হকঃ গণপরিবহন নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে,  তাদের নিয়ে বাস মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে পুরো জাতির সাথে তামাশা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্যাসেঞ্জার ভয়েসের সাথে আলাপকালে এমনটা বলেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ (খোকন)।  

তিনি বলেন, সরকার ও বিআরটিএ জনস্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিবহনের প্রভাবশালী নেতাদের সন্তুষ্ট করতে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে । সরকার ও বিআরটিএ যে পরিবহন মাফিয়াদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে সেটার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় । বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি - এই দুই সংগঠনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি হয়ে আছে পরিবহন খাত । মানুষের এই দুর্দিনে ভাড়া বাড়িয়ে পুরো জাতির সাথে তামাশা করছে বিআরটিএ।

পরিবহনের এই শীর্ষ নেতা বলেন, করোনার এই মহামারির পরিস্থিতিতে বাস মিনিবাস ভাড়া বাড়ানোয় কোনরকম জনস্বার্থ বিবেচনা করা হয় নাই । পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন নজির নেই । এতে শুধুমাত্র মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে । বিআরটিএর ঘুষ বাণিজ্যের সাথে মালিক শ্রমিক নেতারা জড়িত তাই বিআরটিএ এদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে মরিয়া হয়ে থাকে । মানুষ এখন অভাবে আছে , দুই মাস ধরে কাজ নাই , যারা গণপরিবহন ব্যাবহার করে তারা অত্যন্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের । এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারাই ।  আর এখন গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপরে আরো জুলুম করা হচ্ছে ।

এ যেনো এক মরার উপর খরার ঘা । এ সময়ে ভাড়া না বাড়িয়ে তেলের দাম কমিয়ে গণপরিবহন চালু করা যেতো । কিন্তু যেহেতু বিআরটিএর  সাথে পরিবহনের এই নেতাদের একটা সমঝোতা আছে সেই কারণেই অন্য কোনো উপায় অবলম্বন না করে নেতাদের স্বার্থে সরাসরি এই অতিরিক্ত ভাড়ার চাপ যাত্রীদের উপর চাপিয়ে দিলো । 

ভাড়া বাড়ানোর এই বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের নেতারা উপস্থিত থাকলে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিত ,মালিকদের স্বার্থের পরিপন্থী কথা বলতো তাই বিআরটিএ শ্রমিক লীগের কোন নেতাকে বৈঠকে রাখে নাই । গণপরিবহন নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে তাদের নিয়ে বিআরটিএ বৈঠক করে এইসব জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছ।          

এই ভাড়া বৃদ্ধিতে শ্রমিকদের কোনো লাভ নেই, লাভ শুধু মালিকদের । আমরা ছেয়েছিলাম স্বল্পপরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালানোর । একদিন জোর সংখ্যার নম্বরের গাড়ি চলবে আরেকদিন বেজোড় সংখ্যা । 

হানিফ খোকন আরো বলেন, ভাড়া বাড়ানোর পরও সরকার জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনাই। প্রথমে ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলে পরবর্তীতে টা ৬০ শতাংশ করা হয়। শর্ত ছিল বাসগুলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে , ড্রাইভার হেলপার গ্লাভস মাস্ক ব্যবহার করবে । বাসে উঠার আগে যাত্রীদের জীবাণুনাশক দেওয়া হবে । প্রথম দিনে এগুলো কিছুটা মানা হলেও, দিন যত এগুচ্ছে মালিকরা এগুলোর কোন শর্তই মানছে না  । ৬০ শতাংশের পরিবর্তে অনেক জায়গায় ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ । জীবন জীবিকা দুইটার গুরুত্ব মেনে স্বাস্থ্যবিধির স্বার্থে মানুষ ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া দিতে চাইলেও এখন তো কোনোটায় মানছেনা মালিকরা ।

তারা এখন ভাড়া নিচ্ছে ১২০ শতাংশ বেশি । বি আর টি এ তদারকি করার কথা থাকলেও মাঠে কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা । মালিকরা জানে তারা যা ই করুক বি আর টি এ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিবে না , তারা ক্ষমতাধর । সরকারও তাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে জিম্মি হয়ে যায় ।

বি আর টি এ কতুটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে টা জানতে চাইলে হানিফ খোকন বলেন, সরকারি সংস্থা হলেও কর্মকর্তাদের নানান দুর্নীতির কারণে তারা কখনোই স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারেনা ,অসাধু মালিক শ্রমিক নেতাদের চাপের মুখে তারা সব সময়ই থাকে । সে কারণেই তারা প্রায়ই এই ধরনের জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকে । বি আর টি এর ভিজিলেন্স টিম থাকলেও তারা মাঠ পর্যায়ে কোনরকম কার্যকরি ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ । 

সরকার নৈরাজ্য ঠেকাতে সব শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করার পরামর্শ দেন এই শ্রমিক নেতা । তিনি বলেন , শুধু শাহজাহান খান , ওসমান আলি , মশিউর রহমান রাঙ্গা ও খন্দকার  এনায়েত উল্লাহ কে নিয়েই হবেনা ।